শিক্ষা মন্ত্রী ড.দীপু মনির পরিচয়

দীপু মনির পরিচয়,জীবনী, পেশা, ধর্ম, রাজনৈতিক জীবন নিয়ে আজকের আলোচনা।

ড. দীপু মনি একজন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা হিসেবে ২০০৯ থেকে ২০১৩ অবধি তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠার সময় হতে তিনি সেই দলটির সদস্য। হলিক্রস কলেজ থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন। পরে তিনি আমেরিকার জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বন্দ্ব ও সমঝোতা নিরসনের বিষয়ে একটি কোর্স করেন।

দীপু মনি

শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে ডা দীপু মণি সবার কাছেই পরিচিত। কিন্তু একজন শিক্ষা মন্ত্রীর পদবী ছাড়াও তাঁর আরো পরিচয় রয়েছে। তিনি একই সাথে একজন রাজনীতিবিদ, ডাক্তার এবং আইনজীবি। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই। বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও, তিনি বাস্তবেই একাধারে অনেক গুনের অধিকারী। সেই সাথে তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য। তাছাড়াও ডাঃ দীপু মণি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন যুগ্মসাধারন সম্পাদক। রাজনৈতিক জীবন ছাড়াও তিনি তাঁর অন্যান্য কর্মক্ষেত্রেও সমানভাবে সফল। তিনি তাঁর প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই সমান অবদান রেখেছেন। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক শিক্ষা মন্ত্রী দীপু মণির পরিচয়। 

দীপু মণির জন্ম

ডাঃ দীপু মনির জন্ম ১৯৬৫ সালের ৮ ডিসেম্বর। তিনি চাঁদপুর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম এম এ ওয়াদুদ তিনি একজন রাজনীতিবোধ ও একুশে পদক বিজয়ী ভাষা আন্দোলন কর্মী তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগের প্রথম কাউন্সিলনির্বাচিত সাধারন সম্পাদক ছিলেন।  তাঁর মায়ের নাম রহিমা ওয়াদুদ। তিনি একজন শিক্ষিকা ছিলেন। তাঁর ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু একজন চিকিৎসক। 

ডাঃ দীপু মনির পরিবার

ডাঃ দীপু মনির স্বামীর নাম তৌফিক নাওয়াজ। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন এডভোকেট। সেইসাথে তিনি আন্তর্জাতিক একটি লফার্মের প্রধান।তিনিআলাপএর  একজন শিল্পীও।  এই দম্পতির দুজন সন্তান রয়েছে। তাঁদের পুত্রের নাম তওকীর রাশাদ নাওয়াজ এবং কন্যার নাম তানি দীপাভলী নাওয়াজ। 

শিক্ষা জীবন

শিক্ষা জীবনে দীপু মনি হলিক্রস কলেজের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি পড়াশোনা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে তিনি এমবিবিএস পাশ করেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ থেকে এমপিএইচ ডিগ্রি অর্জন করেন। শুধু তাই নয়, তিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশ  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকে এলএলবি পাশ করেন। এরপর তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে মাস্টার্স করেন। এখানেই শেষ নয়, তিনি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরও শিক্ষার্থী ছিলেন। সেখান থেকে তিনি সেখান থেকে সমঝোতা ও নিরসন এর ওপর একটি কোর্স  সম্পন্ন করেন।

ড দিপু মনি

কর্মজীবন

ডাঃ দীপু মনি ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই সাথে তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার বাংলাদেশের সর্বপ্রথম মহিলা পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিবেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। দীর্ঘ ৫ বছর সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো চাঁদপুর৩ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়াও ডাঃ দীপু মনি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন। তিনি প্রথমবার যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে। এটি ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তিনি তৃতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে চাঁদপুর৩ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ২০১৮ সালে। 

তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উত্তরসূরী হিসেবে ২০১৯ সালে তিনি শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী তিনি বর্তমানেও শিক্ষামন্ত্রীর পদে বহাল আছেন। 

অর্জন

ডাঃ দীপু মনি বর্তমানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবিও। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে নানারকম সমস্যা নিরসনে গুরুত্বপূর্ন উদ্যোগ গ্রহন করে। তাঁর এমন গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপের কারনেই বাঙ্গলাদেশ সমুদ্র জয় করতে সক্ষম হয়। এর ফলস্বরূপ প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সাথে  বাংলাদেশ সরকারের প্রায় চার দশক ধরে চলমান সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় চূড়ান্ত ভাবে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহন করে এবং ২০১২ সালে বাংলাদেশ সমুদ্র জয় করে। এমন গুরুত্বপূর্ন অবদানের কারনে তিনি ২০১৪ সালে দ্বিত্বীয় বারের মতো পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।  পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রেরিয়াল অ্যাকশন গ্রুপের প্রথম নারী ও দক্ষিন এশীয় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। সামাজিক উন্নয়ন এবং প্রাশাসনিক অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য তিনি মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করেন।

অবদান

মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পূর্বে দীপু মনি স্বাস্থ্য আইন ,স্বাস্থ্য অর্থায়ন , স্বাস্থ্য নীতি ও ব্যবস্থাপনা  ইত্যাদি বিষয়ে যথেষ্ট কাজ করেছেন। এগুলো ছাড়াও তিনি নারী অধিকার, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি , কৌশলগত পরিকল্পনা , আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদির মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে কাজ করে গেছেন।  পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার আগে তিনি দুই যুগ ধরে তিনি এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার জনপ্রতিনিধি , বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও কেবিনেট মন্ত্রীদের কাছে তাঁর দলের নেত্রী ও দলীয় অবস্থান তুলে ধরার মতো গুরুত্বপূর্ন কাজ গুলোর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।  এগুলোর পাশাপাশি তিনি লেখালেখি , পরামর্শ প্রদান , গবেষণা, শিক্ষকতা ও এডভোকেসি কর্মসূচি পরিচালনা করেছেন। তিনি অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে না পারা মানুষের জন্য ও বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহন করেন।  এর অংশ হিসেবে তিনি দুস্থ ও চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত মানুষদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিকের ব্যবস্থা করেন।  সেখানে দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা গরিব রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হতো। 

তিনি নারীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন।  যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের সহযোগীতায় তিনি দলীয় নারী কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেন। এ প্রশিক্ষনে এরআওয়ামী লীগের দুজন মাস্টার ট্রেইনারের মধ্যে ডাঃ দীপু মনি অন্যতম ছিলেন। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ডাঃ দীপু মনির নেতৃত্বে ৭৪এর মুজিব ইন্দিরা স্থল সীমান্ত  চুক্তির প্রটোকলটি ২০১২ সালে সাক্ষরিত হয়   এর ফলাফল হিসেবে  বাংলাদেশ ও ভারতের ছিটমহল ও স্থল সীমান্তের স্থায়ীভাবে সমাধান হয়। তিনি দক্ষিন এশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও দৃঢ় করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এর ফলশ্রতিতে বাংলাদেশ দ্বারা প্রস্তাবিত  SAARC Charter of Democracy ১৬তম সার্ক সম্মেলনে গৃহীত হয়েছে। সেই সাথে  BIMSTEC সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ঢাকায়  BIMSTEC এর সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটিই বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার সচিবালয়।  

তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে  লিবিয়ায় আটকে পড়া ৩৭ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিকদের লিবিয়া থেকে দেশে প্রত্যাবসানের নেতৃত্ব প্রদান করে। তাঁর একান্ত চেষ্টার ফলে সৌদি আরবে অনেক দিন ধরে বন্ধ থাকা ইকামা পরিবর্ত্নের সুযোগ পুনরায় চালু হয়। এর ফলে ৮ লক্ষ বাংলাদেশী শ্রমিক সৌদিতে বৈধতা পায়। একই সময়ে সৌদির পাশাপাশি মালয়শিয়াতেও ২ লক্ষ ৬৮ হাজার বাংলাদেশী অবৈধ শ্রমিক বৈধতা পায়। 

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় যেসকল বিদেশী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার পক্ষে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিল তাদের সম্মামনা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহন করে। আর এ উদ্দেশ্যে  গঠিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন ডাঃ দীপু মনি। তাঁর নেতৃত্বে এই কমিটি এই জাতীয় কমিটি ১০ টি প্রতিষ্ঠান ও ৩২৫ জ ন ব্যক্তিকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মামনা প্রদান করে। 

বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানী বৃদ্ধির জন্য নতুন বাজার সৃষ্টি এবং বিভিন্ন দেশের সাথে বানিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে একাধারে কাজ করে গেছেন দীপু মনি। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তিনি নতুন উনিশটি  মিশন খোলার সিধান্ত নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১০ টি মিশনের কার্যক্রম তাঁর সময়কালেই শুরু হয়েছিল।

উপরে উল্লেখিত এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ন পদক্ষেপ এবং কাজ ছাড়াও ডাঃ  দীপু মনি অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে গেছেন। তাঁর যথাযথ উদ্যোগের ফলেই যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, জাপান , দ.কোরিয়া , ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক  ঘনিষ্ঠ হয়েছে। 

3 thoughts on “শিক্ষা মন্ত্রী ড.দীপু মনির পরিচয়”

Leave a Comment