জেনে নিন শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয়

একটি শিশু জন্মানোর পর তাকে সুস্থ সবল রাখার দায়িত্ব তার বাবা মায়ের। এই ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল শিশুকে বিভিন্ন টিকা দেওয়া। বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে শিশুর শরীর যাতে লড়াই করার জন্য সক্ষম হয়ে ওঠে সেইজন্যই শিশুকে নানা রকম টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এই টিকা দেওয়ার কিন্তু অনেক নিয়ম কানুন আছে। শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয় অথবা কী কী টিকা শিশুকে দেওয়া যায়, কখন দেওয়া যায় এসব সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা উচিত বাবা মায়েদের। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয় এবং শিশুদের টিকার প্রকারভেদ সম্পর্কে জানব। 

শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয়

সাধারণত, শিশুর জন্মের একমাস পর্যন্ত তাকে নবজাতক বলা হয়। নবজাতকের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য অনেক নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি তার টিকাকরণও জরুরি। 

শিশুকে টিকা দেওয়া জরুরি কেন? 

টিকা বিজ্ঞান এর এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। টিকা নানা রকম এর কঠিন রোগের হাত থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখে। পোলিও, যক্ষা, ধনুষ্টংকার, হাম বা বসন্ত বা জলবসন্ত ইত্যাদি রোগগুলি কে পূর্বে প্রাণঘাতী বলে বিবেচনা করা হত। তবে এই রোগগুলির টিকা আবিষ্কার এর পর থেকে আগের মত প্রানঘাতী বলে এদের আর বিবেচনা করা হয় না। শিশু অবস্থায় এই টিকা গুলো দেয়া হলে ভবিষ্যতে এসব রোগ হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে হ্রাস পায়। টিকা এইসব রোগের বিরুদ্ধে শিশুর দেহে এক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ফলে জীবাণু শিশুর দেহে আক্রমণ করতে পারে না। 

এক মাসের শিশুর যত্ন । জেনে রাখা প্রয়োজন

শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয়

টিকা দানের আগে করণীয়: 

জন্মের পর মায়ের কাছ থেকে পাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে শিশু অনেক রোগ জীবাণুর মোকাবিলা করতে পারে। তবে, নির্দিষ্ট একটা সময় পরে মায়ের থেকে প্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অপর্যাপ্ত হয়ে যায়। তখন টিকার দরকার হয়। টিকা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। শিশুর দেহকে রোগের সাথে লড়াই করার যোগ্য করে তোলে। নানান রোগের আক্রমণ থেকে টিকা শিশুকে বাঁচায়। টিকা শিশুর জন্য নিরাপদ। তবে, টিকা দেওয়ার আগে কিছু বিষয় জেনে নিতে হবে। যেমন- কোন রোগের টিকা দেওয়া হচ্ছে, টিকার গুরুত্ব, শিশুর সেই টিকা নেবার শারীরিক অবস্থা আছে কি না ইত্যাদি। এছাড়াও, শিশুকে টিকা দেওয়ার আগে স্বাস্থ্যকর্মীকে জানানো দরকার যে, শিশুর শারীরিক অবস্থা কেমন। শিশুর কোন এলার্জি আছে কি না বা জ্বর আছে কিনা, পায়খানা নর্মাল নাকি পাতলা ইত্যাদি বিষয় ডাক্তারকে অবগত করতে হবে। আবার, পূর্বে টিকা গ্রহণ করার পর কোন সমস্যা হয়ে থাকলেও সেটিও স্বাস্থ্যকর্মীকে জানাতে হবে। 

টিকার সময়সূচি: 

শিশুকে ইঞ্জেকশন এর মাধ্যমে অথবা মুখে তরল দিয়ে খাওয়ানোর দ্বারা টিকা দেওয়া হয়। শিশুকে টিকা দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় সূচি থাকে। শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয় তা নিয়ে চিকিসক মা বাবাদেরকে অবগত করেন। তাছাড়াও, বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে স্বাস্থ্যকর্মীরাও শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয় তা নিয়ে আপনাকে ধারণা দিয়ে থাকেন। 

টিকার সময়সূচিতে কোন টিকা, কত বছর বয়সে, কত ডোজ দিতে হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা থাকে। সরকার থেকে ইপিআই প্রক্রিয়ায় দশটি রোগের টিকা দেওয়া হয়। যক্ষা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস বি, পোলিও, হুপিং কাশি, ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টংকার, পিসিভি, জন্ডিস, হাম, রুবেলা ও এম আর এই ইপিআই টিকাদান প্রকল্পে রয়েছে। এই ভ্যাক্সিন দিলে এই রোগ গুলোর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই রোগ গুলোর বিরুদ্ধে শিশুর দেহে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। জন্মের থেকে প্রথম ১৪ দিনের মধ্যে পোলিও জিরো ও বিসিজি টিকা দেওয়া হয়। এটি প্রথম টিকা। এর পরে বাচ্চার বয়স ৪২ দিন হলে বাকি টিকা গুলো দিতে শুরু করা হয়। শিশুর বয়স ১৫ বা ১৬ মাস পর্যন্ত প্রায় ৫ থেকে ৬ বার টিকা দিতে টিকাকেন্দ্রে যেতে হয়। 

শিশুর বয়স দুই মাস হলে রোটা ডায়রিয়ার টিকা দেওয়া যায়। ছয় মাস বয়সের মধ্যে শিশুকে ২ থেকে ৩ ডোজ রোটা ডায়রিয়ার টিকা দিতে হয়। শিশুর ছয় মাস বয়সের পর থেকে প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাক্সিন নিতে হয়। এছাড়া, শিশুর ১ বছর বয়স হলে হেপাটাইটিস এ বা জন্ডিস ও জলবসন্ত এর টিকা দিতে হবে। শিশুর বয়স ২ বছর হবার আগেই হেপাটাইটিস এ এর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। এছাড়া, শিশুর দুই বছর বয়স হলে কলেরা, টাইফয়েড এর মত সংক্রামক রোগের ভ্যাক্সিনও নিতে হবে। 

শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয় সে সম্পর্কে আমরা এই প্রতিবেদনে একটি সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। শিশুকে টিকা দিলে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে শিশু সুরক্ষিত থাকে। বাংলাদেশে ইপিআই টিকা প্রকল্পের ফলে সংক্রামক রোগের হাত থেকে শিশু মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমেছে। তাই, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শিশু জন্মের কতদিন পর টিকা দিতে হয় তা নিয়ে আরও ভালো করে জেনে শিশুকে নিয়ম মেনে টিকাকরণের ব্যবস্থা করা উচিত। 

Leave a Comment